আকাশে বাতাসে আলোতে বাংলাদেশ - লাল সবুজ

শিরোনাম

বিজ্ঞাপন দিন

Ads

বিজ্ঞাপন দিন

Ads

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৯

আকাশে বাতাসে আলোতে বাংলাদেশ


বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র এই বাংলাদেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনগণের সর্বজনীন উৎসব হলো বাংলা নববর্ষ। গ্রামীণ কৃষিপ্রধান এই দেশে মূলত কৃষির সুবাদে প্রবর্তিত এই দিনপঞ্জির নববর্ষ আজ স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক সংস্কৃতিরও অংশ।
আজ শহরে-গ্রামে সর্বত্র উৎসবের আবহ, চলছে উৎসব সংগীত, বাজছে উৎসবের বাজনা। তরুণ-তরুণী আর শিশু-কিশোররা তো বটেই, আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই এই উৎসবের ডাকে সাড়া দিয়ে ঘর ছেড়ে পথে নেমে এসেছেন।
আজকের বারতা হলোÑ ‘ওরে যাব না আজ ঘরেরে ভাই, যাব না আজ ঘরে।কী করব আজ? ‘ওরে, আকাশ ভেঙে বাহিরকে আজ নেব রে লুট করে।আজ উৎসবের আনন্দে আকাশ-বাতাস-আলোতে সকল প্রাণে আনন্দের জোয়ার বইছে। মানুষের জীবনে প্রকৃতির সঞ্জীবনী সুধার গুরুত্ব কেবল রবীন্দ্রনাথ নন, দেশ-বিদেশের আরও অনেক কবি ও দার্শনিক বারবার বলেছেন।
আর প্রকৃতির সান্নিধ্যে উৎসবের আবহে মানুষে মানুষে মিলনের মধ্য দিয়েই তৈরি হয় বিশুদ্ধ মানবিক পরিবেশ। নববর্ষ আমাদের কেবল ঘরছাড়া করে পথে নামায় না, ঘরের বাইরে ছড়ানো আদিগন্ত বিস্তৃত প্রকৃতির বিশালতা ও বৈচিত্র্যের অনুভূতিতে প্রাণিত করে। এই বৈচিত্র্যময় বিশালতা এক অলৌকিক মহৎ বোধে মানুষকে তার দৈনন্দিন সাংসারিক জীবনের সকল ক্ষুদ্রতা ও গ্লানি ভুলে সবার সঙ্গে সম্মিলিত হওয়ার প্রেরণা দেয়।
আজ নববর্ষের শুভ প্রভাতে আমরা সেই প্রেরণায় বলীয়ান হব। আজ এ কথা বিশেষভাবে বলা প্রয়োজন, কেননা বিগত বছরটি জুড়ে আমরা কেবল বৈষয়িক ভাবনায় বিভোর মানুষের কাছ থেকে মনুষ্যত্বের লাঞ্ছনা-অবমাননার নিষ্ঠুর প্রকাশ দেখেছি। সর্বশেষ, ফেনীর কিশোরী নুসরাত জাহান রাফির মর্মস্পর্শী মৃত্যুর ঘটনা বাঙালিজীবনের চরম অবক্ষয়ের এমন এক চিত্র তুলে ধরেছে যেন তা আমাদের গৌরবময় সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে ব্যঙ্গ করছে।
ইতিহাসের এই উপহাস ও ধিক্কারকে যেন আজকের নববর্ষের সম্মিলিত জাগরণের শক্তিতে ফিরিয়ে দিয়ে বলতে পারিÑ ‘মুছে যাক গ্লানি মুছে যাক জরা।আমরা কী করতে পারি? এই গানের পরের চরণের প্রতিধ্বনি তুলে যেন বলতে পারিÑ ‘অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।বৈশাখের তপ্ত আবহ প্রচ- দাবদাহে যেন আমাদের সকল গ্লানি ও ক্ষয় মুছে নবজীবনের শক্তিতে প্রাণিত করে, যেন জাতি হিসেবে জেগে উঠতে পারিÑ নববর্ষে এই আমাদের প্রার্থনা। নিজেদের জাতীয় চেতনা নিশ্চয় নববর্ষে দেশব্যাপী ছড়ানো উৎসব-অনুষ্ঠানের আনন্দে সবার মনকে অনুপ্রাণিত রাখবে।
তাই এই সাথে বলব নববর্ষ বাঙালি-পাহাড়ি-আদিবাসী সকলের জীবনে যে আনন্দবার্তা নিয়ে আসে তা যেন ক্ষণিকের না হয়, কেবল এই উপলক্ষের গ-িতে একদিনের পরিসরে সীমাবদ্ধ না থাকে।
এ যেন উš§ূল, ভাসা ভাসা, তাৎপর্যহীন যাপন-উদযাপনেই নিঃশেষিত না হয়। এ চেতনা যেন আমাদের অন্তরের গভীরে শিকড়বদ্ধ হয় যাতে চেতনার নানা প্রকাশে তা ডালপালা মেলে ফুলে-ফলে বিকশিত হতে পারে। কেবল একটি দিন নতুন রঙিন পোশাক পরে, ফুলের ও মাটির গয়নায় নারীরা বিশেষ সেজে, ঘরে বা বাইরে বাঙালি ঐতিহ্যের খাবার খেয়ে, বাংলা গানে-নাচে-কবিতায় আকাশ-বাতাস মুখরিত করে প্রবল উৎসাহে আমোদে-প্রমোদে মেতে উঠে কাটিয়ে দিয়ে পরের দিন থেকেই সব ভুলে বসলে চলবে? বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাংলা গান, বাঙালি খাবার, বাঙালি সাজ-পোশাক এবং এর মাধ্যমে এই প্রকৃতি এই দেশকে ভালোবাসার দিন কি কেবল এই একটিতেই সীমিত থাকবে?
আমাদের জীবনযাপন, জীবনের উদযাপন আবার প্রতিদিনের জীবনচর্চায় কি এই ধারা অব্যাহত থাকবে না? জাতির চরিত্র নির্মাণ, জাতীয় লক্ষ্যাদর্শ প্রণয়ন, নিজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জন্য গৌরববোধ, আপন ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতাÑ এসব কীভাবে তৈরি হবে? নববর্ষের প্রথম দিন বিশেষ দিন, উৎসবের দিন, প্রেরণা ও চেতনার দিন এ কারণে যে এদিন নিজে এবং সকলে মিলে নিজেদের নবায়নের দিন। ঠিক যেমনটা প্রকৃতিতে ঘটে। শীতে পাতা ঝরে, বসন্তের শেষে নবসাজে প্রকৃতি সেজে উঠতে থাকে। আর নববর্ষে প্রকৃতির সে সাজ পূর্ণতা পায়।
মানুষকে এভাবেই বিগত বছরের সকল গ্লানি, জরা মুছে বৈশাখী অগ্নিদাহে শুচি হয়ে নবায়নের কাজে সানন্দে যুক্ত হতে হবে। তা চলবে সারাটা বছর ধরে। বাংলাদেশ তার সমৃদ্ধ ভাষা-সংস্কৃতির এবং ঐতিহ্যের গুণেই ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে, বাঙালির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের সূচনালগ্নে এবারের নববর্ষ হবে আপন ঐতিহ্যে মাথা তুলে বিশ্ব দরবারে দাঁড়াবার বছর। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এসে এগিয়ে যাব উন্নত দেশের পর্যায়ে।
সে যাত্রা সফল হবে জাতি তার চরিত্র এবং লক্ষ্যপথ নিয়ে বিভ্রান্তি-বিতর্ক কাটিয়ে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারলেই। কবির ভাষায় বলতে হয়Ñ বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

বিজ্ঞাপন দিন

Ads