জামালপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলায় সাংবাদিক শফিক জামানের মৃত্যুর অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসক মুরাদ হাসান বলেছেন, ‘শুধু একজন সাংবাদিক নয়, আমার নিজ জেলার এত বড় একটি হাসপাতালে চিকিৎসক বা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলায় একজন সাধারণ মানুষও যদি মারা যায়, তাহলে সারা দেশের অবস্থা কেমন হবে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যা যা সহায়তা দরকার, তার সবকিছুই তো সরকারি হাসপাতালগুলোতে দিচ্ছেন। তাহলে মানুষ সেবা পাবে না- এসব আর শুনতে রাজি নই। সরকারি হাসপাতালে এই অবস্থা চলতে পারে না।’
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসক মুরাদ হাসান আজ শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ প্রতিদিনের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি শফিক জামানের জানাজায় অংশগ্রহণ শেষে রাত সাড়ে ৭টায় জামালপুর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। সভায় আগামীকাল রবিবার বিকেল ৪টায় সাংবাদিক শফিক জামানের মৃত্যু এবং হাসপাতালের নানা সমস্যা নিয়ে সার্কিট হাউজে জরুরি বৈঠক করবেন বলেও সিদ্ধান্ত জানিয়ে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের দায়িত্বে অবহেলায় সাংবাদিক শফিক জামানের মৃত্যু জামালপুরের সর্বমহলের বিবেকে নাড়া দিচ্ছে। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এই মৃত্যুটা আমাদের জন্য শিক্ষা। এ ঘটনাটা আমি দেখেই ছাড়বো। যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এ ঘটনার জন্য দায়ী চিকিৎসক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই শেষ কিছু নয়। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানেরও ব্যবস্থা করা হবে। বিনা চিকিৎসায় বা কারো দায়িত্বে অবহেলায় একজন মানুষও যাতে মারা না যায়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ মতবিনিময় সভা চলাকালে উপস্থিত সাংবাদিকরা সদর হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাটি আমার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট হওয়ায় আমার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আমি ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি সবাইকে সঙ্গে নিয়েই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এ জন্য আগামীকাল রবিবার বিকেল ৪টায় সার্কিট হাউজে বসছি। সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। আমি সবার কাছ থেকেই শুনতে চাই। তারপর দেখেন আমি কি ব্যবস্থা নেই।’ এ সময় তিনি খুব শিগগির এই হাসপাতালে একটি করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) স্থাপন এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের আশ্বাস দেন।
মতবিনিময়কালে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর, সিভিল সার্জন গৌতম কুমার রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জামালপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান ডলসহ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক শফিক জামান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। ওই রাতেই তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন